লেখক: মু. আসাদুল্লাহ খান:
স্বাধীন বাংলাদেশ, মানুষ সকল প্রকার বৈধ কর্মের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে স্বাধীন। কিন্তু এই স্বাধীনতা স্বাদ বারবার নষ্ট করে দিচ্ছে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ও কুচক্রি মহলের কিছু মানুষের বিষাক্ত পরিকল্পনা এবং আচরণ।
পরিকল্পিত উপায়ে বিভিন্ন ধার্মাবলম্বীদের কোনঠাসা করার জঘন্য প্রবনতা ছড়ানো হচ্ছে। ধর্মকেন্দ্রিক বিষয়ে দ্বন্দ্ব বাঁধানো, বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং জনমত সংগ্রহের এ প্রক্রিয়া আমাদের সামাজিক অনুশাসনকে ইতিমধ্যে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে এবং ধর্ম সমূহে বর্ণিত অপশক্তি ও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই প্রত্যেকের স্বাধীনতা আছে একজন নিজে ধর্ম নাই মানতে পারেন সেটা তিনি এবং সৃষ্টিকর্তা বুঝবেন, সে অর্থে ধর্মীয় ব্যক্তি স্বাধীনতা প্রত্যেকের আছে।
সেটা আমাদের ব্যাপার না। ব্যাপার হলো সামাজিকভাবে ধর্ম বিমুখতাকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সকলকে ধর্মীয় বিধানের প্রশ্নে বিরক্ত করে তোলার চেষ্টা করা।
যেমন, সমাজের কোন অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোন মুসলিম কিছু বললেই একটা গোষ্ঠি খেউ খেউ করে ওঠে। কেন? যারা নিরপেক্ষ তারা নিরপেক্ষ থাকেন। যদি কোন মুসলমান স্বেচ্ছায় ইসলামের নিয়মের বাইরে যায় সে যাক সেটা প্রমোট করা বা তাকে উৎসাহ দেওয়া তো আপনার কাজ না। ৮০% মুসলমানের দেশে মানুষ ইসলামী অনুশাসন আশা করবে এটাই স্বাভাবিক। আপনারা যেহেতু কোন ধর্মই মানেন না তাহলে ধর্মীয় বিষয়ে কেন কথা বলতে আসবেন? নিজের মত থাকেন।
ইসলামের পর্দা বিধান নিয়ে কথা বললে তা নিয়ে মিডিয়ায় সোর পড়ে যায়। আরে পর্দা থাকবে কি থাকবে না সে বিষয়টা মুসলমানরা দেখবে। একজন নাস্তিক হিসেবে অন্যের ধর্মীয় বিষয়ে নাক গলানো বেমানান?
বলা হচ্ছে, মুসলমানদেরকে সকলের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যেতে হবে। কিংবা হিন্দুদেরকে মুসলমানদের সব অনুষ্ঠানে যেতে হবে। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? প্রতিটি ধর্মের একটি নিজস্ব গাম্ভীর্য ও সীমা আছে। কে তার ধর্ম কিভাবে মানবে সেটা তার ধর্ম এবং সে নিজে নির্ধারণ করবে। ধর্মীয় অবমাননা করা বা করতে শেখানোর অধিকার কি আদৌ একজন নাস্তিকের আছে?
আমরা বেশিরভাগ লোকই নিজ নিজ ধর্ম সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ ধারণা রাখতে সক্ষম হইনা। আর এই সুযোগে এই গোষ্ঠী আমাদের ধর্মীয় অনুশাসনকে বৈরিভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে শিক্ষিত কুসংস্কারমুক্ত মানুষগুলোকে ধর্মের প্রতি বিরক্ত করে তুলছে।
মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়। ধর্মের অনুসারী কিছু মানুষের আবেগতাড়িত বা জ্ঞানের অভাব জনিত কিছু ভুল হওয়া খুবই স্বাভবিক। অথচ এই ব্যাপারটাকে ধর্মের দুর্বলতা হিসেবে তুলে ধরে মিডিয়ায় তুলোধুনো করে অপপ্রচার চালানোর মত গুজব রটানো এবং সামাজিক অস্বস্তি তৈরির অধিকার নাস্তিকদের কি আসলেও আছে??
পাশাপাশি শেখানো হচ্ছে ধর্মীয় পোশাক কেন্দ্রিক এক ধরনের বুলিং। টুপি, দাড়ি, পাঞ্জাবী কিংবা জুব্বা-পাগড়ী, ধুতি, গাউন, বোরখা এমন পোশাকগুলোকে চরম অবমাননা কর এবং হাস্যকর করে উপস্থাপন করা হচ্ছে এই নাস্তিক চক্রের মাধ্যমে।
অপর পক্ষে প্রমোট করা হচ্ছে ধর্ম সমূহের সাথে সাংঘর্ষিক নগ্ন ধরনের পোশাকগুলোকে। মোল্লা, মুন্সি, কাঠ-মোল্লা এই ধরনের বুলিং করার অধিকার একজন নাস্তিককে কে দিয়েছে ? কই আমাদের কোন অমুসলিম পরিচিত মানুষেরা তো একে অপরের ধর্ম নিয়ে এতো ব্যাস্ত নয়।
তাহলে কারা?? উত্তরটা খুব সহজ, এই দালালীর দায়িত্ব মূলত ভারত তাদেরকে দিয়েছে। শিল্প ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নামে বিভিন্ন সংগঠন খুলে এরা মূলত আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংস করে ভারতের স্বার্থ উদ্ধারের পথ সুগম করছে। এই কথাগুলো যদি এযুগেও কেউ না বুঝে থাকেন তার অর্থ সে আসলে জানতেই চাননা।
এবার আপনি যদি একটু ভালোভাবে খেয়াল করেন, দেখবেন এসব শিল্পগোষ্ঠীর প্রত্যেকেই মাদক সেবন, লিভ টুগেদার, সমকামিতা, পরকীয়া প্রেম, উন্মুক্ত জীবনাচরণকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে, বিশ্বাস করে এবং প্রচার করে। এদের মধ্যে কিছু লোকের উচ্চ শৈল্পিক গুণ থাকে আর বাকিরা এগুলো চর্চা করে কিংবা সার্ভ করে। অবশ্য অনুসারিদের নগন্য শৈল্পিক গুণ প্রায় সব মানুষের প্রাকৃতিকভাবেই থাকে। তাই এদের ফ্যান হবার কোন কারণ নেই।
আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো এদের থাকে একটি ফাঁদ! হ্যা ফাঁদ। এরা কিছু সামাজিক কাজের মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যার সুস্পষ্ট কোন লক্ষ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকেনা। কিছু সামাজিক সমস্যাকে পুঁজি করে এরা শিক্ষিত অনুসারী ধরে। অথচ এদের উপরোল্লিখিত বাজে গুনগুলো দিনশেষে অনুসারীদের ক্ষতি ডেকে আনে। এবং এগুলোই বর্তমান সমাজে অশান্তি এবং সামাজিক অপরাধের মৌলিক কারণ। আর এই গোষ্ঠীর প্রধানদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘RAW’ এর এজেন্ট এবং ভারতীয় দালাল হিসেবে পাওয়া গেছে।
এরা কোন ধর্ম মানবে না, তা না মানুক সেটা কোন ব্যাপার না। কিন্তু এরা সব ধর্ম ত্যাগ করিয়ে মানুষকে ধর্মহীন একটি প্লাটফর্মে কেন একত্রিত করতে চায়? এরপরও কি বলতে হবে যে তারা নিরপেক্ষ? তারা মোটেও নিরপেক্ষ নয়। তারা হলো নাস্তিক নামক সুবিধাভোগী একটি দালাল পক্ষ। আর এদের উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সমাজিক একটি অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে রাখা এবং দেশের শিক্ষিত যুবসমাজকে ধ্বংস করা। বর্তমান বাংলাদেশে যে একটি তথাকথিত সুশীলশ্রেনি গড়ে উঠেছে এটি তাদেরই জঘন্য অপচেষ্টার ফসল। এদের গোপন প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে ভেতর থেকে খোগলা করে দিবে।
সম্প্রতি জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের প্রেক্ষাপট ওলোট-পালট হয়ে যায় আর হঠাৎ এই কুচক্রী মহলের আসল চেহারা প্রকাশ পেয়ে যায়। ফলে এরা বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে। আর এখনই সময় এদেরকে সমূলে উৎপাটন করার। এরা আমাদের ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব এবং ব্যক্তিদূর্বলতাকে পুঁজি করে আমাদেরকে পরোক্ষভাবে শোষন করবে এটা আর মেনে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। ধর্মের কথা বাদই দিলাম জাতিগতভাবে উৎকর্ষ লাভ করতে হলেও আমাদেরকে এই জীবানু থেকে মুক্ত হতেই হবে।
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িকতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। আবহমান কাল ধরে এদেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ একত্রে এবং নিরাপদে বসবাস করছে। তেমন কোন সমস্যা আসলেও ছিল না সামনেও হবে না। অতএব, ধর্মভিত্তিক ভেদাভেদ এদেশে মূলত এক অসার বাক্য বৈ কিছু নয়।
Leave a Reply